Tuesday, March 6, 2018

REFRIGERATION

আপনার ফ্রিজের যত্ন নিতে 19  টিপস :কিভাবে রেফ্রিজারেটরের যত্ন  নিবেন

রেফ্রিজারেটর হল খুবই সক্রিয় উপকরণ যা সারাদিনই চলতে থাকে আর তাই এর জন্য কিছু আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু দূর্গন্ধযুক্ত খাবার পরিষ্কার করার মত আপনি  বিগত সময়গুলোতে আপনার রেফ্রিজারেটরের প্রতি কতটুকু যত্ন নিয়েছেন?

আপনি যদি আপনার ফ্রিজটিকে অনেক দিনের জন্য ভাল রাখতে চান- সধারণত ১৩ বছরের জন্য- তাহলে চলুন দেখা যাক আপনার ফ্রিজের যত্ন নিতে 19 টি  টিপস  এবং নিচের সহজ কাজগুলো করুন।

রেফ্রিজারেটরের যত্ন  নিবেন কিভাবে-productreviewbd

কিভাবে রেফ্রিজারেটরের যত্ন  নিবেন

. দরজার সিল পরীক্ষা করুন

ঢিলা সিল ঠাণ্ডা বাতাস বাইরে বের করে আনে, যা বিদ্যুৎ অপচয় করে এবং আপনার ফ্রিজের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। প্রথমে নিশ্চিত হোন সিলগুলোতে খবারের কোন কণা আটকে নেই। ( এগুলোকে প্রতি বছরে নূন্যতম দুইবার করে পরিষ্কার করুন, এর জন্য একটি টুথব্রাশ এবং বেকিং সোডা ও পানির মিশ্রণ ব্যবহার করুন)

এরপর এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করুনঃ একটি টাকার নোট দরজায় এনে এমনভাবে খুলুন যেন অর্ধেক অংশ ভিতরে এবং অর্ধেক অংশ বাইরে থাকে। যদি এটি সহজেই পিছলিয়ে আসে, তাহলে আপনার অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে দরজার সিল পরীক্ষা করাতে হবে।

. কয়েল পরিষ্কার রাখুন

যখন কনডেনসারের কয়েল ময়লা দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে, তখন রেফ্রিজারেটর ভালভাবে কাজ করতে পারে না। বছরে দুইবার এটিকে খুলে পিছন থেকে কয়েলটিকে আলাদা করুন ( অথবা কয়েলটি যদি সামনের দিকে থাকে, তাহলে গ্রিলটিকে খুলুন।), এইবার রেফ্রিজারেটরটিকে আনপ্লাগ করুন, এবং ব্রাশ ব্যবহার করে বাতাস বের করে ফেলুন।

. সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখুন

ফ্রিজটিকে ৩৭ ডিগ্রী থেকে ৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মধ্যে এবং ফ্রিজারটিকে ০ ডিগ্রীর মধ্যে রাখুন।

. রেফ্রিজারেটর বেশি খালি রাখবেন না

নিচু তাপমাত্রা বজায় রাখতে রেফ্রিজারেটরকে সব সময় “থার্মাল ভর” (অনেক উপাদান) এ রাখার প্রয়োজন। ঠান্ডা খাবার এবং পানীয় গরম বাতাস শোষণ করে নেয় যা আপনার দরজা খুলার সাথে সাথেi বের হয়ে যায়। আপনি যদি খুব পেটুক প্রকৃতির হন অথবা আপনার ফ্রিজ যদি আপনার প্রয়োজনের থেকে খুব বড় হয়, তাহলে তার ভিতরে কিছু পানিভর্তি জগ রাখুন।

. দরজাগুলো বন্ধ করে ফেলুন

 বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দরজাগুলো বন্ধ করে ফেলুন এবং ঘরের মধ্যে জমিয়ে রাখা খাবারগুলো ব্যবহার করুন। একটি বন্ধ রেফ্রিজারেটর খাবারকে চার ঘন্টা পর্যন্ত ভাল রাখতে পারে; ফ্রিজার এর তাপমাত্রা ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত বজায় রাখতে পারে যদি এটি ভর্তি থাকে, আর যদি অর্ধেক ভর্তি থাকে তাহলে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত বজায় রাখতে পারে।

কিভাবে আপনার রেফ্রিজারেটরের যত্ন নিবেন

. প্রতি বছর ২ বার কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করুন

কনডেনসার কয়েল রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার থেকে তাপ বের করে নেয়। এরা খুব বড় এবং অনেকটা রেডিয়েটরের মত দেখতে, যা পিছনে অথবা তলদেশে অবস্থিত থাকে। যখন ময়লা এবং আবর্জনা কয়েলে জমে থাকে, তখন রেফ্রিজারেটরের জন্য তাপ বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যা বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এটি অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করে যা মেরামত করতেও প্রচুর টাকা খরচ করার প্রয়োজন হয়। তাই সহজে এবং দক্ষতার সাথে কয়েল পরিষ্কার করার জন্য এই ধরনের বড়-হাতাওয়ালা ব্রিষ্টল ব্রাশ এবংবাতাস ব্যবহার করুন। যে কোন ধরনের নির্দেশনার জন্য আপনার রেফ্রিজারেটরের সাথে সংযুক্ত ম্যানুয়াল দেখুন।

২. দরজার রাবার সিল প্রয়োজনমত পরিষ্কার করুন বা পরিবর্তন করুন-

গ্যাসকেট হল এক ধরনের রাবার সিল যা আপনার রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজারের দরজার আউটলাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সচরাচর আমাদের চোখে পরার মত একটি অংশ যা গরম বাতাসকে আটকিয়ে রাখে। এটিকে কিছু দিন পরপর ভালভাবে কোন মানসম্মত ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন।

সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে গ্যাসকেট এর আবরণ এবং কোন প্রকার সিলই রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজারের জন্য ভালভাবে কাজ করে না।

কয়েক বছর পর গ্যাসকেট ভেঙ্গে যাওয়া, ঢিলা হয়ে যাওয়া এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন এই রকম হয় তখন গরম বাতাস রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজারের ভিতর প্রবেশ করে এবং তাপ দূর করাকে খুব কঠিন করে ফেলে। যা অধিক বিদ্যুৎ খরচ করে এবং আপনার জন্য অধিক বিলের কারণ হয়।

ভাগ্যক্রমে, গ্যাসকেটসমূহ খুবই সস্তা হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই এদেরকে প্রতিস্থাপন করা যায়।

৩. ডিফ্রষ্ট-

ম্যানুয়াল  ডিফ্রষ্ট  রেফ্রিজারেটর /ফ্রিজার

যখন বরফ ফ্রিজারের ভিতরের দেয়ালে এক ইঞ্চি অথবা এর কাছাকাছি ( অথবা এক সেন্টিমিটার এর কমও হতে পারে) বেধ নিয়ে জমে, তখন রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার থেকে খাদ্যদ্রব্যগুলো সরিয়ে ফেলুন,  থার্মোষ্ট্যাট বন্ধ করে ফেলুন অথবা এই অংশটি আনপ্লাগ করে ফেলুন, এবং সবগুলো বরফকে গলতে সাহায্য করুন।

বরফগুলো সম্পূর্ণরুপে গলে গেলে, পুনরায় এই অংশটি চালু করুন, এটিকে কক্ষ তাপমাত্রায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, এরপর পুনরায় খাদ্যদ্রব্যসমূহ স্টক করুন।

সেলফ  ডিফ্রষ্ট  রেফ্রিজারেটর /ফ্রিজার

আপনার রেফ্রিজারেটর যদি সেলফ-ডিফ্রষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে আপনার  আর কিছু করার দরকার নেই। প্রতি ছয় থেকে আট ঘন্টা পর পর আপনার রেফ্রিজারেটর এর কুলিং কয়েলকে সামান্য পরিমাণ গরম করে যেন কয়েলে জমে থাকা বরফগুলো গলে যায়। তারপর এই বরফগলিত পানি রেফ্রিজারেটর/ ফ্রিজারের নিচে অবস্থিত একটি অগভীর প্যানের মধ্যে দিয়ে নিষ্কাশিত হয়।

যদিও পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়, তবুও আপনার ধারাবাহিকভাবে প্যানটিকে পরিষ্কার করতে হবে যাতে সেখানে গন্ধ এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে না পারে।

পরিষ্কার করার জন্য আপনি গরম পানি এবং সামান্য পরিমাণ ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এই জন্য আপনার রেফ্রিজারেটরের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কতিপয় নির্দেশাবলী ম্যানুয়েলে দিয়ে থাকে, অনেক ধরনের মডেলে আপনি প্যানটিকে নিচু গ্রিল দিয়ে আলাদা করতে পারবেন এবং এক পার্শ্বে সরিয়ে রাখতে পারবেন।

৪. ভিতরে পরিষ্কার রাখুন-

প্রতি সপ্তাহে, তাক এবং দেয়াল থেকে ছোট ছোট বরফের ঝরা টুকরা দূর করতে একটি ন্যাকড়া গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে মুছে ফেলুন।

সব ক্ষেত্র ব্যবহার করার  ক্লিনার এই কাজটিকে সহজ করবে এবং যে কোন দাগ অল্প ঘষাতেই দূর করে ফেলবে। আপনি এই ক্লিনারটিকে দরজা এবং হাতলেও ব্যবহার করতে পারেন।

গন্ধ আটকিয়ে রাখার জন্য এবং খাবার অধিক সময় সংরক্ষণ করে রাখতে শক্ত বাতাসধারক ব্যবহার করুন। যদি কোন উপাদান দূর্বলভাবে প্যাকেজড ( উদাহরণস্বরূপ- ফলের কার্টুন) করা থাকে অথবা লিক হওয়ার মতও মনে হয়( উদাহরণস্বরূপ- জমাটবাধা মাংস), তাহলে এটিকে স্টোর করার পূর্বে কোন প্লেট এ রাখুন।

স্ট্যাইনলেস স্টিল ইউনিটের ক্ষেত্রেঃ এই ধরনের ক্লিনিং সল্যুশন এবং টিস্যুসমূহ মূলত স্ট্যাইনলেস স্টিলের রেফ্রিজারেটর থেকে ময়লা এবং হাতের দাগ দূর করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে। মুছার সময়, “গ্রেইন” অথবা স্ট্যাইনলেস স্টিলের প্যাটার্ন অনুসরণ করাই উত্তম।

৫. ডিউডেরাইজ

ডিয়োডোরাইযার দ্বারা খাবার সতেজ রাখা এবং গন্ধ দূর করা যায় যা বিশেষত রেফ্রিজারেটরের জন্যই তৈরি হয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্টান ভেদে, এই ডিয়োডোরাইযার খাবার থেকে দূর্গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডার চেয়ে ৫০ পার্সেন্টেরও বেশি সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। এটি ছয় মাসেরও বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে।

৬. পানি  নির্গমন ফিল্টার বা আইস মেকার পরিবর্তন করুন

পানির নির্গমন প্রক্রিয়া ফিল্টার কমপক্ষে প্রতি বছরে এক বার করে প্রতিস্থাপন করুন।

২.মাসিক যত্ন

বরফ খালি করুন: বরফ ফ্রিজারের গন্ধ শোষণ করে নেয় এবং বিনের নিচে শক্ত আস্তরণের সৃষ্টি করে। বরফ কমাতে এবং সুগন্ধ বজায় রাখতে, আইস বিনগুলোকে প্রতি মাসে খালি করুন; ফ্রিজারে দুর্গন্ধ শোষণ করার বেকিং সোডা একটি খালি বাক্স রাখুন।

তিন  মাসের নিয়মিত যত্ন

দরজার গ্যাসকেট পর্যবেক্ষণ করুনঃ ময়লা এবং দুর্বল গ্যাসকেটসমূহ রেফ্রিজারেটরের দরজাকে শক্ত করে আটকে থাকতে এবং মটরের সাথে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকা থেকে বাধাগ্রস্থ করে। নোংরা গ্যাসকেটসমূহকে সাবানের পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং ভালভাবে শুকান।

সিলগুলো যদি ঢিলা হয়ে যায়, তাহলে তাদের মধ্যে থাকা ম্যাগনেটগুলোকে পরিবর্তন করতে হবে অথবা নতুন করে ম্যাগনেটাইজ করতে হবে।

আপনি যদি দক্ষ লোক হন, তাহলে নিজে নিজেই খুব সহজে রি-ম্যাগনেটাইজ করতে পারবেন- শুধু একটি শক্তিশালী ম্যাগনেট গ্যাসকেটের প্রত্যেক সাইডে রান করান, এইভাবে প্রায় ৫০ বারের মত এই রকম করুন।

কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করুনঃ আপনার ফ্রিজের পিছনের কনডেনসার কয়েল রেফ্রিজারেটরকে ঠাণ্ডা ও ঘনীভূত করে, ও তাপ অপসারণ করে। এগুলো যদি ময়লা এবং পোষা প্রাণীর চুল দিয়ে আবদ্ধ থাকে, তাহলে এগুলো কমপ্রেসরের উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং অধিক বিদ্যুৎ নষ্ট করে।

প্রতি তিন মাসে কনডেনসার কয়েলগুলোকে খালি করুন এবং ব্রাশ যাবতীয় কিছু দিয়ে বাতাস করুন পরিষ্কার করুন। এরপর কয়েলগুলোকে রেফ্রিজারেটর কয়েল ব্রাশ ($৭ ) দিয়ে পুনরায় পরিষ্কার করুন যা যেসব জায়গা সহজে পরিষ্কার করা যায় না তাতেও প্রবেশ করতে পারে। যাদের পরিবারে পোষা প্রাণী আছে তাদের প্রতিমাসে কয়েল পরিষ্কার করা দরকার।

লেভেল ঠিক রাখুন

লেভেল করুনঃ ফ্রিজ যেগুলো সম্পূর্ণ সমান নয়- সাইড-টু-সাইড ও ব্যাক-টু-ফ্রন্ট- ভালভাবে লাগে না, মটরকে চাপ প্রয়োগ করে ও অভ্যন্তরে কনডেনসেশনের তৈরি করে। পরীক্ষা করার জন্য, মেশিনের উপর অংশ লেভেল করুন। তারপর মেশিনটিকে পর্যাপ্ত উচ্চতায়  নিয়ে যান যতক্ষণ পর্যন্ত না ফ্রিজটি লেভেল হয়।

ছয়  মাসের নিয়মিত যত্ন

পানির ফিল্টার পরিবর্তন করুনঃ পরিষ্কার পানি এবং বরফ নিশ্চিত করার জন্য, এবং ছিদ্র ও ফুটা দূর কড়ার জন্য, পানির ফিল্টারটি পরিবর্তন করুন। ফিল্টারের অবস্থান ও কিভাবে এটি সেখানে রাখবেন তা জানতে আপনার ফ্রিজের ম্যনুয়ালটি দেখুন। একটি নতুন ফিল্টার রাখার পর এর মধ্য দিয়ে কয়েক গ্যালন পানি সঞ্চালন করুন যেন এর মধ্যে থাকা অবশিষ্ট কার্বনটুকু দুর হয়ে যায়।

ড্রেইন হোল পরিষ্কার করুন পানি পরার রাস্তা দুর করুন

কনসেনডেশানঃ সঞ্চিত খাবার এবং পানি দুর অপসারণ করুন, এরপর ড্রেইনের এর রাস্তা পরিষ্কার করুন। (নির্দেশনার জন্য নির্মাতা প্রতিষ্টানের ম্যানুয়েল দেখুন।)

প্রতিদিনের যত্ন

  • খাদ্যদ্রব্য দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা করতে কোন কিছু দিয়ে আবৃত করে রাখুন যেন তা ফ্রিজ এবং ফ্রিজারে না ছড়াতে পারে।
  • বেকিং সোডার একটি খোলা বাক্স (৳১) ফ্রিজের ভিটরে রাখুন যেন তা দুর্গন্ধ যাবতীয় এসিড শুষে নিতে পারে।
  • প্রত্যেক পার্শ্বের চতুর্দিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা খালি রাখুন। ( জিরো-ক্লিয়ারেন্স অথবা ফ্রন্ট-ভেন্ডেড ছাড়া)।

এক নিমিষে  দেখে নিনসব কিছু

কিভাবে আপনার রেফ্রিজারেটরের যত্ন নিবেন

১. প্রতি বছরে দুইবার করে কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করুন। কনডেনসার কয়েল রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার থেকে তাপ দুর করে থাকে।

২. প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাসকেট পরিষ্কার ও পরিবর্তন করুন ( রাবারের সিলের দরজা )।

৩. ডিফ্রোস্ট।

৪. অভ্যন্তর পরিষ্কার করুন।

৫. ডিয়োডোরাইজ।

৬. আইস মেকার অথবা পানি নির্গমণের ওয়াটার ফিল্টার পরিবর্তন করুন।

AC

এক নিমিষে  দেখে নিনসব কিছু

কিভাবে আপনার রেফ্রিজারেটরের যত্ন নিবেন

১. প্রতি বছরে দুইবার করে কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করুন। কনডেনসার কয়েল রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার থেকে তাপ দুর করে থাকে।

২. প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাসকেট পরিষ্কার ও পরিবর্তন করুন ( রাবারের সিলের দরজা )।

৩. ডিফ্রোস্ট।

৪. অভ্যন্তর পরিষ্কার করুন।

৫. ডিয়োডোরাইজ।

৬. আইস মেকার অথবা পানি নির্গমণের ওয়াটার ফিল্টার পরিবর্তন করুন।

REFRIGERATOR

ফ্রেশ খেতে কে না চায়। আর এই চাওয়া থেকেই ফ্রিজ এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী। খাবার শীতল করার এই ইলেকট্রনিক ডিভাইসটিকে সাধারণভাবে সবাই ফ্রিজ বলে জানলেও কেতাবি নাম রেফ্রিজারেটর। মূল কাজ খাবার, পানীয় ও জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ দীর্ঘদিন শীতল ও ভালো রাখা।
রেফ্রিজারেটরের আবির্ভাব ঘটেছে অনেক গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে এই গবেষণা। এরপর বিজ্ঞানীরা সাধারণ ও নিরাপদ রেফ্রিজারেটর তৈরিতে সক্ষম হন। জীবনযাত্রার ধরন বদলের সঙ্গে সঙ্গে রেফ্রিজারেটর যেন এখন ঘরের অন্যতম আসবাব।

অতীত ঘেঁটে
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সব সময় খুঁজেছে ঠাণ্ডা করার উপায়। প্রাচীন মিসরে পানীয় ঠাণ্ডা করার জন্য বোতল মাটির পাত্রে থাকা পানিতে ডুবিয়ে রেখে আরেকটি মাটির পাত্র দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো। আর আধুনিক সময়ে রেফ্রিজারেটর নির্মাণের চেষ্টা শুরু হয় ১৯০০ সালের দিকে। ওই সমযকার ঠাণ্ডার প্রয়োজন ও চিত্রটা ছিল আরেক রকম!  ইউরোপে তখন ঠাণ্ডার প্রয়োজন মেটাতে বাড়ি বাড়ি যেত আইসম্যান। এখন যেমন সকালে হকার পত্রিকা দিতে আসে। আইসম্যান আসতেন বিশাল বিশাল বরফখণ্ড নিয়ে। সেখান থেকে খণ্ড কিনে নিয়ে রেখে দেওয়া হতো বাসায় থাকা একটি কাঠের বক্সে। সেই বক্সের নিচে থাকত আরেকটি বক্স। নিচের বক্সে থাকত পানীয়র বোতলগুলো। সাধারণত প্রতি দুদিন পর পর আইসম্যান বরফ দিয়ে যেত। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রেফ্রিজারেটর মোটামুটি এমনই ছিল। এই পদ্ধতি চলে বেশ কিছুদিন। পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় লেকের ওপর জমা বরফ কেটে বিক্রি করার ইন্ডাস্ট্রিও গড়ে ওঠে সে সময়। তখনো কৃত্রিম উপায়ে পানি বরফ করার পদ্ধতি কেউ আপন করে নেয়নি।
এভাবেই চলতে পারত! তবে সমস্যা হয় অস্ট্রেলিয়ার মানুষের জন্য। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক বরফ পাওয়া যেত না। বিদেশ থেকে বরফ আমদানি করাও কঠিন। তাই তারা বৈজ্ঞানিক সমাধান খুঁজতে থাকল। প্রথম সমাধান দেন জ্যাকব পার্কিনস। তবে সমাধানটিকে দেখা হলো বাঁকা চোখে। কারণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে গেলে বরফ কাটার শিল্প নষ্ট হবে এবং বেকার হয়ে পড়বে এই শিল্পে জড়িত থাকা হাজার হাজার মানুষ। তবে জেমস হ্যারিস নামক একজন অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক পারকিনসের প্রযুক্তিতে আগ্রহ দেখাল এবং কৃত্রিম উপায়ে বরফ বানানোর মেশিন তৈরি করে সেটি নিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ায়। আর এভাবেই শুরু হলো অধুনিক রেফ্রিজারেটরের যাত্রা।

প্রযুক্তিটা কী
কোনো বস্তুর চারপাশে অবিরত ঠাণ্ডা বাতাস দেওয়া গেলে সেটি শীতল হয়ে পড়বে। এই ধারণা সামনে রেখেই তৈরি হয় রেফ্রিজারেটর। প্রশ্ন আসতে পারে কেন ঠাণ্ডা হবে? উত্তর—এটাই প্রকৃতির নিয়ম। নিম্ন তাপমাত্রার কোনো বস্তু উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে তাপ শুষে নেবেই। এ কাজটিই কতটা সহজে ও কম খরচে করা যায় সেটিই ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ। ১৯২৭ সালে প্রথম আধুনিক ব্যক্তিগত রেফ্রিজারেটর বাজারে আনে মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক। তখন কম্প্রেসর ও কয়েলের অবস্থান ছিল রেফ্রিজারেটরের উপরি ভাগে।
পুরো পদ্ধতিটি হচ্ছে—একটি গ্যাসকে চাপে ও তাপে তরল থেকে বায়বীয়, ঠাণ্ডা থেকে গরম করার খেলা। এই গ্যাসকে বলা হয় রেফ্রিজারেন্ট। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বায়বীয় পদার্থ। এটিকে প্রবল চাপে তরল করে রাখা হয়। কোনো বায়বীয় পদার্থকে চাপ প্রয়োগে তরল করা হলে সেটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে চাপ কমালে তাপমাত্রাও কমে যায়। আধুনিক রেফ্রিজারেটরগুলোতে টেট্রাফ্লুরোইথেন নামে একটি গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যা দুই ধরনের কয়েলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। খেয়াল করলে দেখতে পাবেন রেফ্রিজারেটরের পেছনের দিকে একটি কয়েল দেখা যায়। যাকে বলা হয় কনডেনসার কয়েল। আর ফ্রিজের প্রতিটি তাকের ভেতরে একধরনের কয়েল থাকে। এগুলোকে ইভেপারেটর কয়েল বলে। দুটি কয়েলের কাজ দুই রকম। ইভেপারেটর কয়েল ভেতরের গরম খাবার থেকে তাপ গ্রহণ করে আর কনডেনসার কয়েল সেই তাপ বাইরে ছেড়ে দেয়। রেফ্রিজারেন্ট পদার্থটি শুরুতে প্রবল চাপে তরল থাকে। রেফ্রিজারেটরের ভেতরের প্রবেশের আগে সেই পদার্থের চাপকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে সেটি তরল থেকে গ্যাসে পরিণত হয় এবং তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। ফলে ফ্রিজের ভেতরে গরম কিছু থাকলে সেটির তাপ বায়বীয় রেফ্রিজারেন্ট শুষে নিয়ে খাবারকে ঠাণ্ডা করে; তবে নিজে গরম হয়। এ জন্য চালু থাকা অবস্থায় রেফ্রিজারেটরের পাশে হাত দিলে কিছুটা উষ্ণতা অনুভূত হয়। এরপর উষ্ণ গ্যাস কমেপ্রসরে আসে এবং সেখানে সেই গ্যাসকে চাপ প্রয়োগ করে বাইরের কনডেনসার কয়েলে পাঠানো হলে সেটি মুক্ত বাতাসে তাপ ছেড়ে আবার তরল অবস্থায় ফিরে যায়। একইভাবে আবারও রেফ্রিজারেটরে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতেই থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বাড়িতে থাকা রেফ্রিজারেটরের দুটি অংশে আলাদা আলাদা তাপ কেন? এর কারণ হচ্ছে একটি অংশকে আমরা বলি ডিপ ফ্রিজ, আরেকটিকে বলি নরমাল ফ্রিজ। মূলত ডিপ ফ্রিজের নাম ফ্রিজার ও নরমাল ফ্রিজের নাম হচ্ছে রেফ্রিজারেটর।

স্মার্ট হচ্ছে রেফ্রিজারেটর
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন অন্যান্য যন্ত্রও স্মার্ট হচ্ছে সেই সঙ্গে স্মার্ট হচ্ছে রেফ্রিজারেটরও। রেফ্রিজারেটরও যুক্ত হয়ে যাচ্ছে আপনার স্মার্টফোনের সঙ্গে। অর্থাৎ স্মার্টফোন থেকেই আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ফ্রিজের তাপমাত্রা। স্মার্টফ্রিজে আছে প্রতিটি ধাপে আলাদা আলাদা তাপমাত্রা ব্যবহার করার সুবিধা।  সেই সঙ্গে এলইডি লাইটিং ও ডিজিটাল তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তো থাকছেই।

আছে অসুবিধাও
রেফ্রিজারেটর তৈরির লক্ষ্যই মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরো সহজ করার জন্য। যেমন পানিকে বরফ করা, খাবার তাজা রাখা। তাই রেফ্রিজারেটরের সুবিধার কথা বলাই বাহুল্য। তবে অসুবিধার দিক যে নেই তা নয়। যেমন—আমরা রান্না করা খাবার রেফ্রিজারেটরে অনেক দিন ধরে রেখে খেতে পছন্দ করি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্না করা খাবার তিন দিনের বেশি রেফ্রিজারেটরে রাখা উচিত নয়। মেরেকেটে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। তাও নির্ভর করে খাবারের ধরনের ওপর। যেসব রান্না করা খাবারে পানি বেশি থাকে সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। এই ফ্রিজে রান্না করা খাবার রাখার সময় বাটিটি টিস্যু দিয়ে মুছে নিলে সেখানে পানি থাকবে না। অতিরিক্ত গরমের দিনে ঘন ঘন ফ্রিজ খোলা থেকে বিরত থাকবেন। তবে শুকনো খাবার রেফ্রিজারেটরেই ভালো থাকতে পারে অনেক দিন।